যদি আপনি একটি ওয়েবসাইট ছাড়াই আপনার ব্যাবসায় অনেকটা এগিয়ে যান হয়তো আপনি ভাবছেন আপনার কি আসলেই কোন ওয়েবসাইট দরকার আছে? ওয়েবসাইট ছাড়াই তো আপনি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। তাহলে আপনার জন্য উত্তর হচ্ছে আপনি পিছিয়ে পড়া সেই ২৯% এ যাদের ব্যাবসার কোনো ওয়েবসাইট নাই। অর্থাৎ বর্তমান এই সময়ে ৭১% ছোট ব্যাবসারই ওয়েবসাইট আছে। একটা ওয়েবসাইট থাকার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আছে। যেই সুবিধা গুলো আপনার ব্যাবসার ভেলু দিন দিন বৃদ্ধি করবে।
আমি অনেক ব্যাবসাকে ডিজিটালি প্রেজেন্ট করতে গিয়ে দেখিছি যে অনেকেই এই কারনে ওয়েবসাইট করতে চায়না কারন তারা ভাবে তাদের ব্যাবসা এখনো অনলাইনে নেয়ার সময় হয়নি কিংবা তাদের ওয়েবসাইট ম্যানেজ করার মতো রিসোর্স বা অর্থ নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা এইটা ভাবেনা যে বর্তমান সময়ে ৮১% মানুষ কোনো কিছু কিনার আগে সেটা অনলাইনে সার্চ দেয়। এরপরও যদি আপনি ভাবেন যে আপনার আসলেই ওয়েবসাইট বানানো উচিত কিনা তাহলে আপনার জন্য ওয়েবসাইট থাকলে কি কি সুবিধা তার কিছু নিচে তুলে ধরা হলো।
৮টি কারনে আপনার ব্যবসার ওয়েবসাইট থাকা প্রয়োজন।
১। ওয়েবসাইট আপনার ব্যাবসাকে আরো প্রফেশনাল করবে।
৮৪% কাস্টমার মনে করে যে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোফাইল আছে তাদের চেয়ে যাদের সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি একটা ওয়েবসাইট আছে তারা বেশি বিশ্বাসযোগ্য। আপনার ব্যাবসার কোনো সার্টিফিকেট বা এওয়ার্ড প্রফেশনাল ভাবে শো করার জন্য ওয়েবসাইটের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি আপনার একটা ওয়েবসাইট থাকার কারণে আপনি একটা ব্র্যান্ডেড ইমেইল এড্রেস পাচ্ছেন (যেমনঃ hello@digitalpondit.com) যা আপনার ব্যাবসার প্রফেশনালিজমকে একধাপ এগিয়ে নিবে। বিশেষভাবে আপনি যখন ইমেইল মার্কেটিং করবেন তখন আপনার পার্সোনাল ইমেইল ব্যবহার করার থেকে একটা বিজনেস ইমেইল ব্যবহার করলে কাস্টমারের কাছে রিলায়েবল বেশি মনে হবে। তাই আপনার ওয়েবসাইট না থাকার কারনে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম একটা পার্ট ইমেইল মার্কেটিং মিস করছেন।
২। ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবে
আপনার বিজনেস কে ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার কাস্টমারের কাছে উপস্থাপন করা আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে একটি। আপনার ব্যাবসা কি, কি নিয়ে কাজ করেন, কোন সমস্যার সমাধান করেন, আপনি কিভাবে কাস্টমারকে সাহায্য করতে পারবেন, এসব কিছু সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহক আপনার কাছ থেকে সেবা নিতে আগ্রহী হবে। এসব তথ্যের মাধ্যমে আপনার কম্পেটিটর থেকে আপনি নিজের ব্যাবসাকে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। আর ওয়েবসাইট ছাড়া এসব কিছুই সম্ভব না। কারন ওয়েবসাইট ছাড়া আপনার বিজনেস সম্পর্কে এসব কোয়ালিটিফুল এবং রিলায়েবল ইনফরমেশন সাজানোভাবে আপনার গ্রাহক কোথাও পাবেনা।
৩। ওয়েবসাইট নতুন কাস্টমার নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
আপনি হয়তো আপনার বর্তমান কাস্টমার নিয়ে খুশি।কিন্তু প্রত্যেকটা ব্যবসায়ীকেই কাস্টমার হারানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা ভোগ করতে হয়। তাই আপনার ধারাবাহিক সফলতাকে ধরে রাখতে আপনার প্রয়োজন নতুন কাস্টমারের। আর নতুন কাস্টমার পাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে গুগল। আপনার যদি কোন ওয়েবসাইট থাকে, সেই ওয়েবসাইটকে যদি আপনি এসইও করে অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে গুগলের প্রথম পেইজে র্যাঙ্ক করাতে পারেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বাড়বে। যার মাধ্যমে আপনি নতুন কাস্টমার পাবেন। এসব কিছুর জন্য আপনার প্রয়োজন একটি ওয়েবসাইটের।
৪। সহজেই আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস শোকেস করতে পারবেন
আপনি ওয়েবসাইটে আপনার কাস্টমারের কাছে হাই-কোয়ালিটি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন আপনি তাদেরকে কি ধরনের প্রোডাক্ট দিচ্ছেন বা কি সার্ভিস দিচ্ছেন। ধরুন আপনি একজন ডেন্টিস্ট। আপনার ওয়েবসাইটের ছবিই আপনার পেশেন্টকে বলে দিবে আপনার সার্ভিস কেমন, আপনি কি কি ট্রিটমেন্ট করেন, আপনি কতটা হাইজেন মেইন্টেন করেন কিংবা আপনার চেম্বার কতটা আধুনিক। এসব কিছুই কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইট দেখেই বুঝবে। আবার ধরুন আপনার একটা রেস্টুরেন্ট বিজনেস আছে। আপনি কি কি মেনু অফার করছেন, আপনার রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিওর কেমন, পিজিক্যাল লোকেশনে গেলে কাস্টমার কেমন ফিল করবে সব কিছুই কিন্তু আপনার ওয়েবসাইট দেখেই কাস্টমার বুঝবে।
৫। কাস্টমার আপনার সাথে যোগাযোগ করতে আগ্রহী হবে।
আপনার কন্টাক্ট ইনফরমেশন সুন্দরভাবে শো করানোর বেস্ট জায়গা হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইট। আপনি ওয়েবসাইটের হেডারে কল বাটন এড করতে পারেন। অথবা আপনি আপনার ওয়েবসাইটে একটি কন্টাক্ট ফর্মও দিতে পারেন। যেখানে কাস্টমার তার ইমেইল বা মোবাইল নাম্বার দিবে আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য। আপনি চাইলে পরবর্তীতে সেই ইনফরমেশন দিয়ে মার্কেটিংও করতে পারেন। এছাড়াও ওয়েবসাইটে কাস্টমারদের রিভিউ সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা যায়। যা দেখে নতুন কাস্টমাররা আগ্রহী হবে আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
৬। ওয়েবসাইট আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
২০২১ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১% বিজনেসেরই ওয়েবসাইট আছে এবং ৮১% কাস্টমারই অনলাইন থেকে কিছু কিনার আগে তা নিয়ে রিচার্স করে। এমতাবস্থায় যদি আপনার ওয়েবসাইট না থাকে আর আপনার কম্পেটিটরের যদি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে যেই মেসেজটা আপনার পাওয়ার কথা ছিলো সেটা আপনার কম্পেটিটর পাবে। সুতরাং আপনি যদি কাস্টমারের সাথে কানেক্টেড থাকতে চান কিংবা আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে যদি আপনি এগিয়ে থাকতে চান তাহলে আপনার ওয়েবসাইট কতটা প্রয়োজন বুঝতেই পারছেন।
৭। ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই।
২০২১ এর গবেষনা অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৪.৬৬ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যা কিনা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫৯.৫% । আর বাংলাদেশে ৪৭.৬১ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে যা মোট জনসংখ্যার ২৮.৮%। সুতরাং আপনার ওয়েবসাইট না থাকার অর্থ হচ্ছে আপনি এই পরিমান মানুষের কাছে আপনার বিজনেসের মেসেজ পৌছাতে ব্যর্থ হলেন।
আর আপনি যদি পেইড মার্কেটিং করার চিন্তা করে থাকেন তাহলে বেস্ট ROI (Return on Investment) পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটের বিকল্প নাই। ওয়েবসাইট থাকলে আপনি কাস্টমারকে রিটার্গেট করে মার্কেটিং করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার কাস্টমার কোন কোন প্রোডাক্ট পেইজে ভিজিট করছে এটাও ট্র্যাক করতে পারবেন। আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোন কাস্টমার কোন প্রোডাক্টের উপর আগ্রহী। এতে আপনার মার্কেটিং কস্ট অনেকটা কমে যাবে শুধুমাত্র ওয়েবসাইট থাকার কারনে।
৮। ওয়েবসাইট তৈরী করা এবং ম্যানেজ করাও এখন সাধ্যের মধ্যে
বর্তমানে অনেক ওয়েবসাইট বিল্ডার সফটওয়ার আছে। যেগুলার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই একটি আকর্ষনীয় ও মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারবেন কোনো কোডিং নলেজ ছাড়াই। এর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস, স্কয়ারস্পেস, উইক্স। এই সফটওয়ার গুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ করে ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারবেন।
আপনি নিজে না পারলেও স্বল্প খরচে ডেভেলপারের মাধ্যমে করিয়ে নিতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে স্বল্প খরচে যারা তৈরী করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ডিজিটাল পন্ডীত। এছাড়া আপনি যে কোন ভালো এজেন্সীর মাধ্যমেও করিয়ে নিতে পারেন।
আশা করি আপনি হয়তো বুঝতে সক্ষম হয়েছেন কেন আপনার ওয়েবসাইট প্রয়োজন এবং প্রয়োজনের তুলনায় ওয়েবসাইট তৈরীর খরচ কতটা নগন্য। এরপরও যদি আপনি চিন্তা করতে থাকেন ওয়েবসাইট করবেন কি করবেন না তাহলে আপনাকে আবার মনে করিয়ে দেই যে আপনার কাস্টমারও অনলাইনে, আপনার কম্পেটিটরও অনলাইনে। তারা আপনাকে রেখেই একে অপরের সাথে কানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। আর আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন।
আর আপনি যদি ওয়েবসাইট তৈরী করার জন্য রেডি থাকেন তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন কিংবা এই টিউটোরিয়াল দেখেও তৈরী করতে পারেন। স্টেপ বাই স্টেপ দেখানো হয়েছে কিভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করতে হয় ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে। ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে ওয়েবসাইট তৈরী করার সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল। ইন্টারনেটের তিন ভাগের একভাগ ওয়েবসাইট এই ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমেই করা। ওয়ার্ডপ্রেসের এফরডেবল কস্ট কম এবং নন-টেকি ইউজারদের জন্যও ইউজার ফ্রেন্ডলি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কেন এর জনপ্রিয়তা এতো বেশি। ওয়েবসাইট তৈরীর পর হোষ্ট করতে হবে। হোস্টিং কি এবং ওয়েবসাইট হোষ্ট করার জন্য বাংলাদেশী কিছু ভালো মানের কম দামি হোস্টিং কোম্পানি দেখে নিতে পারেন এই লিঙ্ক থেকে।
আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করতে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন কিংবা সহযোগীতার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন কিংবা নিচে কমেন্ট করতে পারেন।