আপনার ছোট ব্যবসার জন্য ব্র্যান্ডিং কেন এতো গুরুত্বপূর্ন?
একটা বড় কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডিং এর জন্য যেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায় অনেক ছোট ব্যাবসাই তার কিছুই গ্রহন করতে পারে না। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন ব্র্যান্ড জিনিসটা বড় কোন কোম্পানির জন্য। যাদের কাস্টমার দেশ-বিদেশ নিয়ে। আপনার ধারনা ভূল। বড় কোন কোম্পানির জন্য ব্র্যান্ডিং ঠিক যতটা গুরুত্বপুর্ণ, আপনার ছোট ব্যাবসার জন্যও ব্র্যান্ডিং ঠিক ততটাই গুরুত্বপুর্ণ। আমাদের দেশে ছোট ব্যাবসায়ীরা ব্যান্ডিং এর দিকে কোন গুরুত্বই দেয়না। ভাবে যে বিজনেস বড় হলে দিবো। এইটা একটা ভুল ভাবনা। এই ভাবার কারনেই আর ব্র্যান্ডিং এ গুরুত্ব দেয়া হয়না। অনেক তো ব্র্যান্ডিং ব্র্যান্ডিং করলাম। আসলে ব্র্যান্ডিংটা কি?
ব্র্যান্ড কি?
ব্র্যান্ড কি তা বলতে গেলে সবার আগে বলতে হয় Walter Landor এর সেই বিখ্যাত উক্তিটিঃ “Products are made in the factory, but brands are created in the mind.” আপনার প্রোডাক্ট কি সেইটা ফ্যাক্ট না। আপনার কোম্পানির নাম শুনলে কাস্টমারের মাথায় যেই কল্পনা আসে সেইটাই ব্র্যান্ড বা ব্র্যান্ড পজিশনিং। উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরেকটু ক্লিয়ার হবে। আমরা যদি শাবানের ব্র্যান্ডের দিকে দেখি, লাক্স এর কথা বললে আপনার মাথায় কি আসে? সৌন্দর্য্য? আমি ঠিক ছিলাম 😃 আবার লাইফবয় বললে কি চিন্তা আসে? জীবানুমুক্ত বা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ঠিক না? আপনার যেই চিন্তা সেটাই হচ্ছে ব্র্যান্ড বা ব্র্যান্ড পজিশনিং। যদিও দুইটা শাবানই ইউনিলিভারের। কিন্তু তারা আলাদা ভাবে ব্র্যান্ড পজিশনিং করেছে। এইটাকে বলে মনপলি বিজনেস। এব্যাপারে আরেকদিন কথা বলবো। আমরা আবার ব্র্যান্ডিং এ ফিরে আসি। উপরের উদাহরন থেকে বুঝলাম এভাবেই প্রত্যেকটা ব্র্যান্ড তাদের আলাদা আলাদা পজিশনিং কাস্টমারের মাথায় তৈরী করে নেয়। এবার আমরা আসি দেশের টেলিকম সেক্টরের দিকে। গ্রামিনফোন, এয়ারটেল, বাংলালিংক সবাই কিন্তু বিভিন্ন বোনাস অফার দিচ্ছে, ইন্টারনেট অফার দিচ্ছে। তাহলে তাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়? তারা সবাই আলাদা আলাদা ভাবে তাদের কাস্টমারের কাছে পজিশনিং তৈরী করেছে। যেমন গ্রামীণফোনের তাদের স্ট্রং নেটওয়ার্কের দিকে ফোকাস করে। এয়ারটেল বললে তারা মূলত দেশের ইউথদের ফ্রেন্ডশিপকে ফোকাস করে। আবার বাংলালিঙ্ক বললে তারা ফোকাস করে কম টাকায় বিভিন্ন বান্ডেল অফার। তাদের সবার সার্ভিস এক ক্যাটাগরির হলেও তাদের ব্র্যান্ড পজিশনিং কিন্তু আলাদা আলাদা। ব্র্যান্ডিং কি সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু কেন আপনার বিজনিসের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ?
১. বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেঃ
ব্র্যান্ডিং আপনার কোম্পানিকে কাস্টমারের কাছে আরো বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলবে। উদাহরন স্বরুপ ধরেন আপনি কোন প্রোডাক্টের জন্য ফেসবুকে সার্চ দিলেন। এক পেইজে গিয়ে দেখলেন তাদের ডিজাইনের কোন ধারাবাহিকতা নেই। এক এক ডিজাইন এক এক কালার, ভিন্ন ভিন্ন ফন্ট ইউজ করা হয়েছে। তাদের কন্টের ঠিক নাই। দেখে মনে হয় এক এক ডিজাইন এক একজন করেছেন। আরেক পেইজে গেলেন, এই পেইজে এসে দেখলেন তাদের প্রত্যেকটা ডিজাইন সুন্দর করে একই সাইজে একই কনসেপ্টে করা, সুন্দর কোন ফন্ট ইউজ করা হয়েছে। কন্টেন্ট গুলাও সুন্দর করে লেখা। পোস্টের কন্সটেন্সি আছে। তখন আপনি কোন পেইজ থেকে পণ্য অর্ডার করবেন? আগের পেইজ থেকে নাকি এই পেইজ থেকে? ধারণা পাচ্ছেন ব্র্যান্ডিং কতটা গুরুত্বপূর্ন?
২. আলাদা ভাবে চিনতে সাহায্য করেঃ
আপনার কেন ব্র্যান্ডিং করা উচিত এর অন্যতম গুরুত্বপুর্ন কারন হচ্ছে কাস্টমারের কাছে আপনি নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। সেটা হয়তো আপনার ডিজাইন কিংবা সার্ভিসের মাধ্যমে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন কম্পোনেন্ট হলো লগো। আপনার লগো শুধু আপনার কম্পানিকেই উপস্থাপন করবে না। আপনার ব্র্যান্ডের ইমোশনকে উপস্থাপন করবে। আপনার লগো দেখলেই যেন অনুভব করা যায় আপনার মিশন ভিশন কি।
৩. নতুন কাস্টমার পেতে সাহায্য করে।
কি? শুনে অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। ব্র্যান্ডিং আপনাকে নতুন কাস্টমার পেতে সাহায্য করবে। একটা উদাহরণ দেই, ধরেন আপনি একটা টি-শার্ট কিনলেন অনলাইন থেকে। আপনার টি-শার্ট টি দেখে আপনার ফ্রেন্ডের পছন্দ হলো। আপনার ফ্রেন্ড আপনার কাছে জানতে চাইলো কোথা থেকে নিয়েছেন। যদি কোন রেনডম পেইজ থেকে নিয়ে থাকেন তাহলে আপনি কি বলবেন? বলবেন হয়তো ফেসবুকে একটা পেইজ থেকে নিয়েছি। এইটুকুই তো। হয়তো আপনার নিজেরও সেই পেইজের নাম মনে নাই। আর যদি কোন ভালো একটা ব্র্যান্ড থেকে নিয়ে থাকেন তাহলে কি বলবেন? বলবেন অমুক পেইজ থেকে নিয়েছি। ফ্রিতে আপনার ফ্রেন্ডের কাছে তাদের মার্কেটিং করে দিলেন। এটাই হচ্ছে ব্র্যান্ডিং এর সুবিধা। ওয়ার্ড অব মাউথ হচ্ছে সবচেয়ে স্টং পয়েন্ট যেইটা আপনাকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলবে। ছোট হোক বা বড় হোক, সবচেয়ে লাভবান কোম্পানি গুলোর মধ্যে একটা সাধারণ মিল আছে। তারা সবাই তাদের নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি লিডার।
৪. নিজেস্বতা
আপনি যেই নিশ নিয়ে কাজ করেন ওই নিশে অসংখ্য পেইজ আছে। তাদের থেকে আপনার পার্থক্যটা কি? কাস্টমাররা তাদের কাছে না গিয়ে আপনার কাছে আসবে কেন? আপনার নিজেস্বতা থাকা লাগবে। যেমন ধরেন অর্গানিক ফুডের কথা বলি। দেশে অনেক পেইজ আছে অর্গানিক ফুড নিয়ে কাজ করে। কিন্তু অর্গানিক ফুডের কথা আসলেই আগে খাস ফুডের কথা মাথায় আসে। আপনি এছাড়া আর কয়জনকে চিনেন? আপনি নিশ্চয় অর্গানিক কিছু কিনতে চাইলে সবার আগে সেখানেই যাবেন। এটাই হচ্ছে ব্রান্ডিং এর সুবিধা।
৫. ইমোশনাল কানেকশন
আপনার কাস্টমারের সাথে আপনার কানেকশন থাকা উচিত ইমোশনের মাধ্যমে। এক রিপোর্টে দেখা গেছে কাস্টমারের সম্পর্ক প্রোডাক্টের সাথে থাকেনা, থাকে ব্র্যান্ডের ইমোশনের সাথে। তারা ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। ব্র্যান্ডিং-ই পারে আপনার সাথে কাস্টমারের ইমোশনাল সম্পর্ক তৈরী করতে। একবার কোন কাস্টমারের সাথে ইমোশনাল কানেকশন তৈরী করতে পারলে তখন আর আপনার প্রোডাক্ট কিনার কথা তাকে বলা লাগবেনা। সে নিজ থেকেই আপনার কাছে এসে নিয়ে যাবে।
৬. কাজে অনুপ্রেরণা যোগায়
সবাই সাধারণত কর্মচারী হায়ার করে। যে শুধুমাত্র টাকার জন্য আপনার সাথে কাজ করে। কিন্তু একটা স্ট্রং ব্র্যান্ড সাধারণ কর্মচারী হায়ার করেনা। তারা করে মোটিভেটেড কর্মচারী। যারা আপনার মিশন ভিশন কে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আপনি যখন আপনার গোল কি, আপনার মিশন ভিশন কি সেটা বুঝাতে পারবেন। তখন সে আপনার সাথে শুধু টাকার জন্য কাজ করেবেনা। বরং সে একটা ব্র্যান্ডের সাথে আপনার মিশন ভিশনের জন্য কাজ করবে। এবং সে কাজ করতে পেরেও গর্ববোধ করবে। তার প্রোডাক্টিভিটি এমনিতেই বেড়ে যাবে। সেই সাথে আপনার প্রফিটও।
সফল বিজনেসগুলো তারা নিজেরা নিজেদেরকে তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে লিডার হিসেবে প্রতিষ্টিত করেছে। সেটা ছোট কিংবা বড় যেই বিজনেসই হোক না কেন। এবং সেটা করেছে শুধুমাত্র স্ট্রং ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে। আর একটা ভালো ব্র্যান্ডের কাস্টমার শুধু আর কাস্টমার থাকেনা। সে একজন ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন ব্র্যান্ডিং কতটা গুরুত্বপূর্ন। এখন আপনি কি আপনার বিজনেসের জন্য ব্র্যান্ডিং করবেন নাকি বসে থাকবেন সেটা আপনার বিষয়। আপনার জন্য আরেকজন বসে থাকবেনা। আপনার ব্যাবসার ব্র্যান্ডিং সমস্যা সবাধানের জন্য ফ্রিতে যোগাযোগ করতে পারেন এই লিঙ্কে। Best Branding Agency in Bangladesh